Skip to main content

আরাকানিজ শব্দ ফালৌং (ဖလောင်း)


"ফালৌং" শব্দটি পর্তুগিজদের বুঝাতে ব্যবহৃত আরাকানি শব্দ।  এটি ফার্সি ফারাঙ্গি বা ফিরিঙ্গি শব্দের বিকৃতরূপ, অর্থাৎ ফ্রাঙ্ক, যার অর্থ ইউরোপীয়।  ইউরোপীয়দের বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত  এই শব্দটির ব্যবহার এশিয়ায় অনেক পুরনো।  এখন পর্যন্ত, থাইল্যান্ডে, সমস্ত শ্বেতাঙ্গদের "ফালাং" বলা হয়।


 বার্মিজরা পর্তুগিজদের "পুতাগে" বা বা-ইন-গি বা ফারিঙ্গি বলে ডাকতো, ফারাঙ্গির অপভ্রংশ।  যাইহোক, Ba-yin-gi এর আধুনিক বার্মিজ অর্থ রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের জন্য।


 আরাকানি রাজা মং ফালৌং


 আরাকানি রাজা, মং ফালৌং-এর আসল নাম ছিল চিট হ্নাউং (শিট হানাউং) যার অর্থ সর্বশেষ প্রিয় (পুত্র)।  তিনি ছিলেন মং বার্গির (মং বারগরি) কনিষ্ঠ পুত্র এবং সেই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন আরাকানি সশস্ত্র বাহিনী পর্তুগিজ নৌবহর ধ্বংস করেছিল এবং দিয়াঙ্গার পর্তুগিজ দুর্গ জয় করেছিল।  এই কারণেই তার পিতা তাকে মং ফালৌং (মং ফালৌং) নাম দেন যাকে মোটামুটিভাবে "পর্তুগিজদের রাজা বা শাসক" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে।


 বন্দর শহর "ফালৌংশে'"


 পরে, কিছু পর্তুগিজ আরাকানিদের মিত্র হয়ে ওঠে এবং আরাকানি পতাকার নিচে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে।  তারপর, এই বন্দরটি অনেক পর্তুগিজ বাণিজ্য জাহাজের পাশাপাশি যুদ্ধজাহাজের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে এবং পরে ডাচ জাহাজগুলিও এটি ব্যবহার করে।  তাই এই বন্দরটিকে ফালৌংশে বলা হয় যার অর্থ পর্তুগিজ (সাদা) হারবার/পর্তুগিজ (সাদা) বাজার।


 আরাকান এবং মোগল সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয়েছিল যা ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এর ফলস্বরূপ, চট্টগ্রাম জেলা মোগলদের দ্বারা অধিভুক্ত হয় এবং চট্টগ্রাম আরাকানভুক্ত হয়নি।  এটি ছিল ম্র'উ রাজবংশের পতনের শুরু।


 ব্রিটিশরা বাংলাকে সংযুক্ত করার পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তাদের দূত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে সম্মান জানাতে বন্দর শহরের নাম পরিবর্তন করে কক্সবাজার রাখা হয়।


 ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স


 ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স (১৭৬০-১৭৯৯) ছিলেন একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক, যিনি ১৮ শতকে বাংলা ও বার্মায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।  তার নামে বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরের নামকরণ করা হয়েছে।  ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর হওয়ার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার হিসেবে ক্যাপ্টেন কক্সকে পালংকি ফাঁড়ির সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত করা হয়।  আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইংদের মধ্যে শতাব্দী-ব্যাপী সংঘাত মোকাবেলায় ক্যাপ্টেন কক্সকে বিশেষভাবে সংগঠিত করা হয়েছিল।  তিনি এলাকায় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের বিশাল কাজ শুরু করেন এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেন। ১৭৯৯ সালে ক্যাপ্টেন কক্স তার কাজ শেষ করার আগেই অকাল মৃত্যু হয়েছিল।  পুনর্বাসন কাজে তার ভূমিকা স্মরণ করার জন্য, একটি বাজার স্থাপন করা হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল: কক্সবাজার ("কক্সের বাজার")


 সেই শহরটিকে আজকাল কক্সবাজার বলা হয়, তবে, রাখাইং সম্প্রদায় এখনও শহরটির নাম ဖလောင်းချိတ် ফালাউংশে'।  এই শহরের বন্দরে ইংরেজি, বাংলা এবং বার্মিজ/আরাকানি নামে তিনটি লিপির একটি সাইনবোর্ড রয়েছে।  ইংরেজিতে লেখা হয় “কক্স বাজার” এবং বার্মিজ ভাষায় কেউ পড়তে পারেন ဖလောင်းချိတ်မြို့ “ফালৌংশে'ম্রো”।


বাংলা ভাষান্তরঃ সিরী জুয়েল বড়ুয়া। 


Credit: Khin Maung Saw - Berlin

Comments

Popular posts from this blog

"পাহাড়ি জাতীয়তাবাদ ও নারী প্রশ্ন" প্রসঙ্গেঃ

  উইমেন চ্যাপ্টারে প্রকাশিত ডালিয়া চাকমার লেখা   মুল লেখার লিংক ,👉  এখানে ঢাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক দূরে! এই দূরত্ব-টা বুজতে মগজ লাগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা হচ্ছে কিংবা আপনাকে গালি দেওয়া, হ্যারাসমেন্ট করা! এইসব কিন্তু পাহাড় পর্যন্ত পৌছায় না। পৌঁছালেও আপনি কিংবা আমি পাহাড়ের মানুষের কাছে মূল্যহীন। তাঁদের কাছে জীবন সংগ্রাম ই মুখ্য! আমি আপনি তুচ্ছ। আপনাকে যারা গালি দিচ্ছে আর আপনারা যারা  ভিতর থেকে না দেখে সবকিছুই এক-কেন্দ্রিক ভাবেন! আমি মনে করি আপনারা সবাই এক গোত্রের প্রানী।  আপনাকে যারা গালি দিচ্ছে কিংবা হ্যারাসমেন্ট করছে এক সময় এই বর্বর প্রাণীদের সমাজিকভাবেই শাস্তি দেওয়া হত। যখন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র শাসন শুরু করল তখন থেকেই এরাও শক্তিশালী হয়ে উঠে। পাহাড়ের সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতা হাড়িয়ে যেতে থাকে। অনুরোধ থাকল, যদি সময় হয় জুম ঘরে কিংবা যারা জুম চাষ করে তাঁদের সাথে কয়েক দিন থেকে আছেন। যান্ত্রিক সভ্যতা আর পাহাড়ের সংস্কৃতি আকাশ-পাতাল তফাৎ। এইটা বুজে নেওয়ার দায়িত্ব নিজের আর কারোর নয়। আগে নিজেকে জানুন, আপনি কোথায় থেকে এসেছেন, আপনার আইডেন্টিটি কি? আপনার সংস্কৃতি ...

শীল সম্পর্কে বিস্তারিত

          *** প্রাণী হত্যা মহা পাপ,                   প্রাণী হত্যা হতে বিরত থাকুন।                    উ গুণবদ্ধন পঞ্ঞা মহাথের। ( রাম জাদী)  শীল হচ্ছে আদি কল্যাণ, "সব্ব পাপস্স অকরণং" অর্থাৎ সর্ব প্রকার পাপক্রিয়া বর্জন। পাপক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় কায়ে, বাক্যে ও মনে। যা দ্বারা মন কলুষিত হয়। কিন্তু শীলের লক্ষ্য হচ্ছে পাপের পঙ্কিল পথ পরিহার করে চরিত্রকে শুদ্ধ ও সুন্দর করা। ধর্ম জীবনের বিকাশে, জীবনের পরম কল্যাণ লাভের পথে শীল বা চারিত্রিক শুদ্ধতা প্রথম প্রদক্ষেপ। পঞ্চশীলকে সবসময় সকল মানুষের পরিধানকৃত বস্ত্রের মত নিত্য পালনীয় বলে নিত্যশীল বলা হয়। কিকীব অন্ডং চমরীব বালধিং, পিয়ং বা পুত্তং নয়নং ব এককং, তথেব সীলং অনুরক্খমানকা, সুপেসলা হোথ সদা সগারবতি। কিকী পক্ষী যেমন অন্ড রক্ষা করে, চমরীগাই যেমন স্বীয় লেজ রক্ষা করে, মাতা যেমন এক মাত্র প্রিয় পুত্র এবং কানা যেমন এক চক্ষু সযত্নে রক্ষা করে তেমন শীল অনুক্ষণ রক্ষা উচিত। আজ অষ্ট শীলের প্রথম শীল সম্পর্কে আলোকপাত করব। *...

কাল পুরুষ

  এটি উত্তরাধিকার ও কালবেলা উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ ধরে লেখা আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। কালবেলা উপন্যাসে অনিমেষ যে ফসল বুনেছিল এই উপন্যাসে তা চারা গাছ হয়ে একটু একটু করে বড় হতে থাকে! অনিমেষ আর মাধবীলতার ভালোবাসার ফসল অর্ক। নামটা মাধবীলতার দেয়া। তাদের নিস্তব্ধ জীবনের সূর্য যেন অর্ক। পঙ্গু স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে বস্তির এক বাড়িতে মাধবীলতার বাস! পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে সব সময় কি একটা ভয়ে থাকে মাধবীলতা! বস্তিতে থাকার মাশুল অবশ্য দিতে হয় তাদের। স্কুল আর ঋণের চাপে জর্জরিত মাধবীলতা আর পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু অসহায় অনিমেষের শত সতর্কতার পরও অর্ক আস্তে আস্তে বস্তির পরিবেশে আসক্ত হয়ে পরে। কিলা, খুরকি, বিলা এরাই হয়ে ওঠে অর্কর নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে অন্য একটা ঘটনায় সমাজের উচু তলার কিছু মানুষগুলোর আসল চেহারাটা সামনে আসে অর্কর। ঘটনার তীব্রতায় জ্বর চলে আসে তার। এতবড় ছেলে মায়ের আচলে মুখ গুজে খালি বলে চলে বমি পাচ্ছে মা। কতটা নোংরা কদর্যতা দেখলে একটা ছেলে এমন কথা বলতে পারে এইসব ভেবে তীব্র প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে অর্ক। নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে সমাজের এসব অসঙ্গতির সাথে কখনোই তাল মেলাবে না। তারপর তাকে ব...