Skip to main content

◾প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকা


 

✍️ লিখেছেন - উ গুণওয়াদ্ধন পঞ্ঞা মহাথের


🔰পাণাতিপাতের অর্থ

প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকার অর্থ সকল জীবনধারী সত্ত্বদের প্রাণ সংহার থেকে বিরত থাকা। পিঁপড়া, ছারপোকা, উকুন, মশা, মাছি, শামুক, ঝিনুক, মুরগি, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি সকল প্রাণীর প্রাণ হরণ না করা। যে কোন প্রাণীকে হত্যা করলেই পাণাতিপাত হয়।

প্রাণী হত্যার পাঁচটি অঙ্গ আছে।

১) প্রাণী হওয়া, 

২) প্রাণীবলে জানা, 

৩) হত্যার চিত্ত থাকা, 

৪) হত্যার প্রচেষ্টা করা এবং 

৫) সেই প্রচেষ্টায় মৃত্যু হওয়া।

এপাঁচটি অঙ্গ পরিপূর্ণ হলে প্রাণী হত্যা কর্ম সৃষ্টি হয়। “কম্মপথ” বলতে অপায় গমনের কর্মকে বুঝায়। ‘পাণাতিপাত কম্মপথ’ হলে অপায় ভূমিতে প্রতিসন্ধি হওয়ার ফল প্রদানে জনকশক্তি অবশ্যই সৃষ্টি হবে। কম্মপথ না হলে প্রতিসন্ধি ফল প্রদান করে না।

পাঁচ প্রকার অঙ্গের মধ্যে যে কোন একটি অঙ্গ অপরিপূর্ণ থাকলে সেটা প্রাণী হত্যা হবেনা। উপমা - রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় নিজের অজ্ঞাতসারে পায়ের নীচে পড়ে পোকা-মাকড় ইত্যাদি মারাগেলে প্রাণীহত্যা হবে না।


🔰বড়ছোট ভেদে পাপের তারতম্য-

প্রাণীর শরীর বড় ছোট অনুযায়ী, প্রাণীর আচরণীয় শীল অনুসারে পাপও কম-বেশী হয়।

প্রাণীর আকার বড় হলে বীর্য প্রয়োগও বেশী করতে হয় অর্থাৎ বড় প্রাণী হত্যা করতে অনেক বেশী প্রচেষ্টা করতে হয় বিধায় পাপও বেশী হয়। প্রাণীর আকার ছোট হলে অল্প চেষ্টার মাধ্যমে হত্যা করা যায় বিধায় পাপও কম হয়। উপমা হাতি হত্যা করতে অনেক বেশী বল প্রয়োগ করতে হয়। ছারপোকা হত্যা করতে অল্প চেষ্টাতেই হত্যা করা যায়। তাই হাতির ক্ষেত্রে পাপ বেশী হবে ছারপোকার ক্ষেত্রে কম হবে। আর এভাবেই পাপকর্ম পার্থক্য হয় বলা হয়েছে।

কোন একজন চারিত্রিক ও শীল গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিকে যদি হত্যা করে সেই ব্যক্তি চারিত্রিক গুণাবলী ও শীল গুণের কারণে পাপ বেশী হবে। একজন পৃথকজনকে হত্যা করলে যে পাপ হবে তার চেয়ে অনেক বেশী পাপ হবে কোন মার্গ ফলধারীকে হত্যা করলে। আর অরহতকে হত্যা করলে পঞ্চানন্তরিয় কর্ম হওয়ার কারণে পাপ হবে বর্ণনাতীত।


🔰অনন্তরিয়কর্ম পাঁচটি :-

যে পঞ্চবিধ গুরুতর অপরাধের তড়িৎ প্রতিদান স্বরূপ শাস্তি ভোগ করতে হয়। তাকে পঞ্চানন্তরিয়কর্ম বলে। (পঞ্চ= পাঁচ +অনন্তর (অন+অন্তর)= ফাঁক শূণ্য, নিরন্তর অব্যবহিত, সর্বাপেক্ষা নিকটস্থ।)

পরবর্তী জন্মে অবশ্যই অবীচি নরকে পতিত হওয়ার কর্ম। সেগুলো হল :

১। মাতুঘাতক- মাতাকে হত্যা করা ।

২। পিতুঘাতক- পিতাকে হত্যা করা।

৩। অরহন্তঘাতক- অরহতকে হত্যা করা।

৪। লোহিতুপ্পাদক- বুদ্ধের শরীর থেকে রক্তপাত করা।

৫। সঙ্ঘভেদক- সংঘ ভেদ করা।


বি:দ্র: প্রথম তিনটি প্রাণী হত্যার সাথে অর্ন্তভূক্ত। কোন হত্যা কর্মে যদি প্রাণীর কায় সমান হয়, শীলগুনও একই হয় তবে হত্যায় সময় শক্তি প্রয়োগের তারতম্যের প্রেক্ষিতে পাপ কমবেশী হয়ে থাকে। 

বীর্য বা শক্তি প্রয়োগ ছয় প্রকার আছে।

১. সাহত্থিক প্রয়োগ (স্বহস্তে কৃত ) দা, ছুরি, দন্ড ইত্যাদি দ্বারা কায়িকভাবে হত্যা করে।

২. আন্তত্থিক প্রয়োগ(আদেশ সম্বন্ধীয়) বাক্য দ্বারা হউক চিঠি বা বার্তা মাধ্যমে হউক, কিংবা কোন ইঙ্গিত ইশারা বা সংকেতের মাধ্যমে হত্যা করা বা করানো।

৩. নিসগ্গিক প্রয়োগ (পরিত্যাগ)তীর, ধনুক, বন্দুক ইত্যাদি অস্ত্র দ্বারা হত্যা করা।

৪. থাবর প্রয়োগ (এই রাস্তায় গমনকারী সকল মানুষ পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করুক এই চিন্তা করে গর্ত করে রাখা, হত্যা করার জন্য দা তীর বন্দুক ইত্যাদি তৈরী করে রাখা)

৫. বিজ্জাময় প্রয়োগ- মন্ত্রবিদ্যা (তাবিজ বা চালান) দ্বারা হত্যা করা।

৬. ইদ্ধিময় প্রয়োগ- কর্মগত ভাবে অর্জন করা ঋদ্ধির মাধ্যমে হত্যা করা।


সিংহল দ্বীপে পিতুরাজা রাগ করে নিজের মারির দাতকে হাত দ্বারা আঘাত করার সাথে সাথে চুলসুমন শ্রেষ্ঠীর মৃত্যু হয়।

বেস্ববন দেবরাজ বাকা চোখে তাকালে অনেক যক্ষের মৃত্যু হয়। এরূপ দাতে আঘাত করা, বাকা চোখে দেখা সবই ঋদ্ধিময় প্রয়োগ (অভিধর্মাথভাসাটীকা ৩৮৫)।

আনত্থিক প্রয়োগ হত্যাকৃত ব্যক্তি (বত্থু) হত্যার সময়, হত্যার স্থান(ওকাস), হত্যা করার অস্ত্র (আবুধ) হত্যাক্ষণে ইরিযাপথ (পন্থা বা উপায়). হত্যার সময়েকায়িক শক্তি প্রয়োগ (কিরিয়া বিসেস) এ ছয় প্রকারের আদেশানুযায়ী হত্যা করলে আদেশকৃত ব্যক্তির প্রাণীহত্যা কর্ম সম্পাদিত হবে। হত্যাকারীর প্রাণী হত্যা জনিত কর্ম সৃষ্টি হবে। এই ছয় প্রকারের যে কোনো একটি আদেশ করা হলে এবং সে অনুরূপ হত্যা না করলে হত্যাকারী ব্যক্তিরই প্রাণীহত্যা কর্ম হবে। আদেশকারীর প্রাণী হত্যা কর্ম হবে না, আদেশ করার সময়ে হত্যার চেতনা এবং দ্বেষ চিত্তই প্রধান।

প্রাণীহত্যার বিশেষ উল্লেখ্য যে, এক আঘাতে অনেক প্রাণীর মৃত্যু হলে প্রাণী হত্যা জনিত কর্ম একটি নয় কার্যের শক্তিতে অনেক হবে। মার্গক্ষণে স্মৃতি একটি বীর্য একটি হলেও কার্যের শক্তিতে স্মৃতিপ্রস্থান চারটি, সম্যক প্রধানচারটি হওয়ায় কর্ম অনুরূপ হবে বলে সারত্থ দীপনী টীকাতে বর্ণনা করা হয়েছে।

নির্দিষ্ট কোন প্রাণীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হলে, সেই প্রাণী মৃত্যুবরণ না করে অন্য কোন প্রাণী মৃত্যুবরণ করলে প্রাণীহত্যা জনিতকর্ম সৃষ্টি হবে না। উপমা দুইটি মুরগী খাবার খাওয়ার সময় বাম পাশের মুরগীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দন্ড নিক্ষেপ করলে তা ডান পাশের মুরগীকে আঘাত করে এবং সে আঘাতে মুরগীটির মৃত্যু হলে, চেতনার অপরিপূর্ণতার কারণে প্রাণীহত্যা কর্ম হবে না বলে কঙ্খা অর্থকথায় (১২১)বর্ণনা করা হয়েছে। তবে অন্য উদ্দেশ্যে হত্যার চেষ্টার যে কোন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে অবশ্যই প্রাণীহত্যা কর্ম সৃষ্টি হবে।

গভীর অন্ধকারে মাতাপিতাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছাগল মনে করে হত্যা করলে আনন্তরিক কর্ম হবে। মাতৃঘাতক, পিতৃঘাতক কর্ম হবে, বলে পারাজিকা অর্থকথায় (২/৪২) বর্ণনা করা হয়েছে।

পশু নিজের মাকে হত্যা করলে মাতৃঘাতক কর্ম হয় না, মানুষ গর্ভধারিণী মাকে হত্যা করলে আনন্তরিক কর্ম হয়। এতে মাতৃঘাতক কর্ম হয় বিনয় মহাবর্গের অর্থকথায় (৩০৪) বর্ণনা করা হয়েছে।

পৃথকজন অন্য একজন পৃথকজন ব্যক্তিকে আঘাত করে, বিষ প্রয়োগে মারার চেষ্টা করে এবং সেই প্রয়োগের কারণে ঐ পৃথকজন ব্যক্তি গভীর বীর্য ধারনে ধ্যান ভাবনার মাধ্যমে অরহত্ব মার্গফলে উপনিত হয়ে যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে হত্যাকারীর অরহন্ত ঘাতক কর্মই হবে। (সম্মোহনীবিনোদনী অর্থকথা ৪০৮)

দেবতা অরহতকে হত্যা করলে অরহন্ত ঘাতক কর্ম হয় না। কারণ মানুষ অরহতকেই হত্যা করলে অরহত ঘাতক কর্ম হবে। (বিনয় মহাবর্গ অর্থকথা ৩০৫)

পশু (মানুষ)অর্হতকে হত্যা করলে অর্হত্ত্বঘাতক কর্ম হয় না। কিন্তু কোন মানুষ মনুষ্য অর্হত্ত্বকে হত্যা করলেই অর্হত্ত্বঘাতক কর্ম হয়।


**** প্রাণীহত্যা জনিত শীলভঙ্গের দোষসমূহ--

প্রাণী হত্যা করলে নিম্নে বর্ণিত ফল ভোগ করতে হবে। উপরে উল্লেখিত প্রাণী হত্যা জনিত কর্মের মধ্যে পঞ্চানন্তরিক কর্ম - মাতৃঘাতক, পিতৃঘাতক, অর্হৎ ঘাতক কর্মের কারণে অবীচি নরকে পতিত হয়ে দুঃখ ভোগ করতে হবে (মূলটীকা)। ভিক্ষু বা শীলবানদেরকে হত্যা করলে কালসুত নিরয়ে দুঃখ ভোগ করতে হবে। (পাট জাতক)।


বুদ্ধ শ্রাবস্তীতে জেতবন বিহারে অবস্থান করলে তোদেয়্য ব্রাহ্মনের ছেলে শুভ মানব অল্পায়ু ও দীর্ঘাযুর কারণ জিজ্ঞাসা করলে বুদ্ধ প্রতুত্তোরে অন্যের জীবন হরণ করলে মৃত্যুর পর অপায়ে পতিত হয়। অল্পায়ু হয়ে রোগাগ্রস্ত হওয়ার কারণ বলে দেশনা করেন।অন্যকে হত্যা করলে আশী কল্প নরকে দগ্ধ হয়। সেখান থেকে চ্যুত হয়ে পাঁচশত জন্ম প্রেতলোকে, এরপর মাছ, সর্প, কুকুর, ছাগল ও মৃগাদি তির্যক যোনিতে পাঁচশতবার জন্ম গ্রহণ করতে হয়। খুদ্দক পাঠ অর্থকথায় প্রাণী হত্যা করা ও বিরত থাকার যে সব ফলের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ।

🔰দোষ বা কুফলগুলো-

১. শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপরিপূর্ণ হওয়া।

২. বিকলাঙ্গ হওয়া।

৩. অজ্ঞানী নির্বোধ হয়।

৪. পায়ের তালু হাতের তালু অসমান হয়।

৫. কুৎসিত হয় ।

৬. বর্ন অনুজ্জল বা মলীন হয়।

৭. ত্বক শরীর কোমল হীন হয়।

৮. দুর্বল হয়।

৯. কথা অস্পষ্ট থাকে, তোতলামি করে।

১০. মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়।

১১. নিজের পরিষদ পুনঃপুন নষ্ট হয়।

১২. ভয়ে শিউরে উঠে।

১৩. অস্ত্র বিষ দ্বারা বিপদগ্রস্ত হয়।

১৪. অপঘাতে মৃত্যুবরণ করে।

১৫. মোহগ্রস্ত হয়।

১৬. বন্ধু বান্ধবহীন হয়।

১৭. কুৎসিত রূপবর্ণ হয়।

১৮. কুজো হয়।

১৯. রোগগ্রস্ত হয়।

২০. শোক পরিদেবন বেশী পায়।

২১. প্রিয় ব্যক্তি ও ছেলে মেয়েদের সাথে বিচ্ছেদ হয়।

২২. অল্পায়ু হয়।


প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থেকে সুগতি প্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীতে মনুষ্য লোকে জন্ম নিয়ে নিম্মলিখিত সুফলগুলো ভোগ করে। খুদ্দক পাঠ অর্থকথায় প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকার সুফল বর্ণনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ-


****প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকার সুফল সমূহ ****

১. অঙ্গে পরিপূর্ণ হয়।

২. কখনো বিকলাঙ্গ হয় না।

৩. দ্রুত সবকিছু করতে পারে।

৪. সুপ্রতিষ্ঠিত পদ বিশিষ্ট হয়।

৫. হাতের ওপায়ের তালু সমান হয়।

৬. অপরূপ সৌন্দর্য অধিকারী হয় ।

৭. ত্বক মোলায়েম হয়।

৮. পরিষ্কার হয়।

৯. অদম্য সাহসী হয়।

১০. মহা শক্তিশালী ও বলবান হয়।

১১. কথা সুস্পষ্ট ও শ্রুতিমধুর হয় (বাক্যলাপ কর্ণ সুখকর ও জড়তা শূন্য হয়।)

১২. সকলের প্রিয় পাত্র হয়।

১৩. নিজের পরিষদ নষ্ট হয় না (কেউ বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে না)।

১৪. ভয়মুক্ত থাকে।

১৫. অস্ত্র বিষ প্রয়োগে কোন ক্ষতি হয় না।

১৬. অপঘাতে কিংবা দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেনা।

১৭. মোহগ্রস্ত হয় না।

১৮. পরিবার পরিজন ও শুভানুধ্যায়ী সর্বদা পরিবৃত হয়।

১৯. বর্ণ উজ্জল ও সুন্দর হয় (রূপ লাবণ্যময়)।

২০. রূপবান ও সুশ্রী হয়।

২১. রোগমুক্ত ও নিরোগী হয়।

২২. শোক পরিদেবে কষ্ট পায় না।

২৩. প্রিয় জনদের সাথে বিচ্ছেদ হয় না।

২৪. দীর্ঘায়ু হয়।

২৫. মৃত্যুবরণ করলে স্বর্গ লাভ করে।


*** মল্লিকাদেবী--

বুদ্ধের দায়িকা কোশলরাজের স্ত্রী মল্লিকাদেবী অতীতে এক মহিলা জন্মে বাড়িতে আগত অতিথিদের জন্যে কোন তরকারি না থাকাতে বাড়িতে পালিত ছাগলের বাচ্চাকে কেটে রান্না করেছিলেন। সেই প্রাণীহত্যার অকুশল কর্মের কারণে মৃত্যুর পর অবীচি নরকে ছাগলের লোম অনরূপ অনেক বছর দুঃখ ভোগ করতে হয়। অবীচি নরক থেকে মুক্ত হয়েও অগণিত জন্ম অন্যের দ্বারা গলাকেটে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।


*** শুকর শিকারী চুন্দ-

ভগবান বুদ্ধ রাজগৃহ নগরে বেলুবন বিহারে অবস্থান কালীন চুন্দ নামক ব্যক্তি শুকর পালন করত এবং সেগুলো হত্যা করে মাংস বিক্রি করে জীবন ধারণ করত, চুন্দ একদিন রোগগ্রস্ত হয়ে জীবিত অবস্থায় অবীচির আগুনে প্রজ্জলিত হয়ে শুকরের মত চিৎকার করতে করতে সপ্তম দিবসে মৃত্যুবরণ করে অবীচি নরক যন্ত্রণা ভোগ করে।


*** নালিকের রাজা --

কলিঙ্গ রাজ্যে নালিকের রাজা পাঁচশত ঋষির কাছে ধর্মশ্রবণ করার সময় দলপতি ঋষি অন্যের জীবন হত্যা করা ভালো নয়, হত্যা করলে নরক দুঃখ ভোগ করবে, অল্পায়ু হবে ইত্যাদি পঞ্চশীল ভঙ্গের দোষ গুলো দেশনা করাতে ঋষি আমাকে নিন্দা করে দেশনা করছে বলে, ঋষির উপর ক্রোধান্বিত হয়ে ছোয়াইং খাওয়ানোর জন্য পাং করে। ঋষিরা আগমন করার সময়ে মল-মূত্র উনাদের সামনে দিয়ে গ্রহণ কর, পান কর বলাতে ঋষিগণ ঘৃণায় অপমানে উঠে যাওয়ার সময়ে রাজ কর্মচারীদের দ্বারা দন্ড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন, এরূপ অকুশল কর্ম করার কারণে অস্ত্রবৃষ্টি হয়ে রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।


এ সকল কর্ম আপন বলবত্তায় ভবিষ্যতে যখনই অবকাশ লাভ করে, তখনই ফল দান করে থাকে। কর্মজ জীবন প্রবাহে এ জাতীয় কর্মের বন্ধ্যাভাব নেই। এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে হত্যা করল এবং এক ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করল। এ স্থলে নিহত হন্তা বা প্রাণ রক্ষকের সঙ্গে এক অতীন্দ্রিয় সম্পর্ক ঘটল। ফলে হন্তারককে নিহত হতেই হবে আর রক্ষককে রক্ষা করতেই হবে। যেহেতু কর্ম ও ফল দুই বিভিন্ন অবস্থা হলেও ইহারা এক ও অভিন্ন বটে। যতদিন ইহার ফল ভোগ শেষ না হবে, ততদিন ইহার নিষ্ফলতা নেই। শুভ হোক বা অশুভ হোক কর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। পাপ ক্ষুদ্র বলে অবহেলা করা উচিত নয়। সুতরাং প্রাণী হত্যা হতে বিরত থাকা একান্ত উচিত।

Comments

Popular posts from this blog

"পাহাড়ি জাতীয়তাবাদ ও নারী প্রশ্ন" প্রসঙ্গেঃ

  উইমেন চ্যাপ্টারে প্রকাশিত ডালিয়া চাকমার লেখা   মুল লেখার লিংক ,👉  এখানে ঢাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক দূরে! এই দূরত্ব-টা বুজতে মগজ লাগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা হচ্ছে কিংবা আপনাকে গালি দেওয়া, হ্যারাসমেন্ট করা! এইসব কিন্তু পাহাড় পর্যন্ত পৌছায় না। পৌঁছালেও আপনি কিংবা আমি পাহাড়ের মানুষের কাছে মূল্যহীন। তাঁদের কাছে জীবন সংগ্রাম ই মুখ্য! আমি আপনি তুচ্ছ। আপনাকে যারা গালি দিচ্ছে আর আপনারা যারা  ভিতর থেকে না দেখে সবকিছুই এক-কেন্দ্রিক ভাবেন! আমি মনে করি আপনারা সবাই এক গোত্রের প্রানী।  আপনাকে যারা গালি দিচ্ছে কিংবা হ্যারাসমেন্ট করছে এক সময় এই বর্বর প্রাণীদের সমাজিকভাবেই শাস্তি দেওয়া হত। যখন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র শাসন শুরু করল তখন থেকেই এরাও শক্তিশালী হয়ে উঠে। পাহাড়ের সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতা হাড়িয়ে যেতে থাকে। অনুরোধ থাকল, যদি সময় হয় জুম ঘরে কিংবা যারা জুম চাষ করে তাঁদের সাথে কয়েক দিন থেকে আছেন। যান্ত্রিক সভ্যতা আর পাহাড়ের সংস্কৃতি আকাশ-পাতাল তফাৎ। এইটা বুজে নেওয়ার দায়িত্ব নিজের আর কারোর নয়। আগে নিজেকে জানুন, আপনি কোথায় থেকে এসেছেন, আপনার আইডেন্টিটি কি? আপনার সংস্কৃতি ...

শীল সম্পর্কে বিস্তারিত

          *** প্রাণী হত্যা মহা পাপ,                   প্রাণী হত্যা হতে বিরত থাকুন।                    উ গুণবদ্ধন পঞ্ঞা মহাথের। ( রাম জাদী)  শীল হচ্ছে আদি কল্যাণ, "সব্ব পাপস্স অকরণং" অর্থাৎ সর্ব প্রকার পাপক্রিয়া বর্জন। পাপক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় কায়ে, বাক্যে ও মনে। যা দ্বারা মন কলুষিত হয়। কিন্তু শীলের লক্ষ্য হচ্ছে পাপের পঙ্কিল পথ পরিহার করে চরিত্রকে শুদ্ধ ও সুন্দর করা। ধর্ম জীবনের বিকাশে, জীবনের পরম কল্যাণ লাভের পথে শীল বা চারিত্রিক শুদ্ধতা প্রথম প্রদক্ষেপ। পঞ্চশীলকে সবসময় সকল মানুষের পরিধানকৃত বস্ত্রের মত নিত্য পালনীয় বলে নিত্যশীল বলা হয়। কিকীব অন্ডং চমরীব বালধিং, পিয়ং বা পুত্তং নয়নং ব এককং, তথেব সীলং অনুরক্খমানকা, সুপেসলা হোথ সদা সগারবতি। কিকী পক্ষী যেমন অন্ড রক্ষা করে, চমরীগাই যেমন স্বীয় লেজ রক্ষা করে, মাতা যেমন এক মাত্র প্রিয় পুত্র এবং কানা যেমন এক চক্ষু সযত্নে রক্ষা করে তেমন শীল অনুক্ষণ রক্ষা উচিত। আজ অষ্ট শীলের প্রথম শীল সম্পর্কে আলোকপাত করব। *...

কাল পুরুষ

  এটি উত্তরাধিকার ও কালবেলা উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ ধরে লেখা আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। কালবেলা উপন্যাসে অনিমেষ যে ফসল বুনেছিল এই উপন্যাসে তা চারা গাছ হয়ে একটু একটু করে বড় হতে থাকে! অনিমেষ আর মাধবীলতার ভালোবাসার ফসল অর্ক। নামটা মাধবীলতার দেয়া। তাদের নিস্তব্ধ জীবনের সূর্য যেন অর্ক। পঙ্গু স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে বস্তির এক বাড়িতে মাধবীলতার বাস! পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে সব সময় কি একটা ভয়ে থাকে মাধবীলতা! বস্তিতে থাকার মাশুল অবশ্য দিতে হয় তাদের। স্কুল আর ঋণের চাপে জর্জরিত মাধবীলতা আর পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু অসহায় অনিমেষের শত সতর্কতার পরও অর্ক আস্তে আস্তে বস্তির পরিবেশে আসক্ত হয়ে পরে। কিলা, খুরকি, বিলা এরাই হয়ে ওঠে অর্কর নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে অন্য একটা ঘটনায় সমাজের উচু তলার কিছু মানুষগুলোর আসল চেহারাটা সামনে আসে অর্কর। ঘটনার তীব্রতায় জ্বর চলে আসে তার। এতবড় ছেলে মায়ের আচলে মুখ গুজে খালি বলে চলে বমি পাচ্ছে মা। কতটা নোংরা কদর্যতা দেখলে একটা ছেলে এমন কথা বলতে পারে এইসব ভেবে তীব্র প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে অর্ক। নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে সমাজের এসব অসঙ্গতির সাথে কখনোই তাল মেলাবে না। তারপর তাকে ব...